রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইবাদাত বিবরণ

সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর কারণে রাসূল (রাঃ) এর পা ফুলে যেত

মুগিরা ইবনে সুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। তাকে বলা হলো, আপনি এত কষ্ট করছেন অথচ আল্লাহ তা’আলা আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি কি শোকরিয়া আদায়কারী বান্দা হব না ?

রাসূল (রাঃ) রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন এবং সাহারির পূর্ব পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন

আসওয়াদ ইবনে ইয়াজিদ রাঃ থেকে বর্ণিত

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাহাজ্জুদ সালাত (রাতের সালাত) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি রাতের প্রথমাংশে ঘুমাতেন। তারপর সালাতে দাঁড়াতেন এবং সাহরীর পূর্বক্ষণে বিতর আদায় করতেন। এরপর প্রয়োজন মনে করলে বিছানায় আসতেন। তারপর আযানের শব্দ শুনে জেগে উঠতেন এবং অপবিত্র হলে সর্বাগ্রে পানি বইয়ে গোসল করে নিতেন নতুবা ওযু করতেন। তারপর সালাত আদায় করতেন।

তিনি রাতের শেষ অর্ধাংশেও সালাত আদায় করতেন

ইবনে আব্বাস আঃ থেকে বর্ণিত

একবার তিনি তাঁর খালা মায়মূনা (রাঃ)-এর গৃহে রাত্রিযাপন করেন। তিনি বলেন, তিনি মায়মূনা (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বালিশের লম্বা দিকে ঘুমান আর আমি প্রস্থের দিকে ঘুমাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধ রাত কিংবা তাঁর কিছুক্ষণ পূর্ব পর্যন্ত ঘুমালেন। তারপর তিনি জাগ্রত হন এবং মুখমণ্ডল মুছে ঘুমের জড়তা দূর করেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর তিনি ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে যান এবং উত্তমরূপে ওযু করেন। এরপর সালাতে দাঁড়ান।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর পার্শ্বে দাড়ালাম। তিনি আমার মাথার উপর ডান হাত রাখলেন, এরপর তিনি আমার ডান কান ধরে একটু মললেন (এতে আমি তাঁর ডান পাশে এসে দাড়ালাম)। অতঃপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, তারপর ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। মানের বর্ণনা মতে তিনি ২ রাক’আত করে ৬ বার (১২ রাক’আত) সালাত আদায় করেন। এরপর বিতর সালাত আদায় করেন। এরপর আরাম করেন।

এরপর তাঁর কাছে মুয়াযযিন এল। তখন তিনি সংক্ষেপে ২ রাক’আত সালাত আদায় করেন। এরপর মসজিদের উদ্দেশে বের হন এবং ফজরের সালাত আদায় করেন।

রাতে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে না পারলে দিনে তা আদায় করে নিতেন

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত

যদি কখনো রাসূল (রাঃ) নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন।

রাসূল (রাঃ) রাতের সালাত দু রাকাত করে আদায় করতেন

তিনি বলেন, আমি একবার রাসূল (রাঃ) এর সালাত গভীর মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করার ইচ্ছা করলাম। তাই আমি তাঁর বাড়ি অথবা তাঁবুর চৌকাঠের উপর মাথা ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে সংক্ষেপে ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর তদপেক্ষা সংক্ষেপে ২ রাক’আত, এরপর তাঁর চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক’আত এবং তাঁর চেয়ে সংক্ষেপে আরো ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। এরপর সংক্ষেপে আরো ২ রাক’আত সালাত আদায় করলেন। তারপর বিতর আদায় করেন। এভাবে ১৩ রাক’আত সালাত আদায় করেন

রাসূল রাঃ রমজান মাসে ১১ রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতেন

আবু সালাম ইবনে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত

তিনি আয়েশা (রাঃ) এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসে কত রাক’আত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতেন ? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযান অথবা অন্য সময় ১১ রাক’আতের বেশি আদায় করতেন না। প্রথমে ৪ রাক’আত আদায় করতেন। কী রকম একাগ্রতা নিয়ে ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন সে বিষয়ে তুমি জিজ্ঞেস করো না। তারপর আবার ৪ রাক’আত আদায় করেন। তবে এর একাগ্রতা ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর ৩ রাক’আত আদায় করতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের পূর্বে কি নিদ্রা যান? তিনি বললেন, আমার চোখ নিদ্রা যায় কিন্তু অন্তর নিদ্রা যায় না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

রাসূল রাঃ এর এক রাতে সালাতের বিবরণ

হুজারফা ইবনে ইয়ামান রাঃথেকে বর্ণিত

একদা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে রাত্রে সালাত আদায় করেন। তিনি বলেন, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করলেন, তখন বললেন,

اللَّهُ أَكْبَرُ ذُو الْمَلَكُوتِ وَالْجَبَرُوتِ , وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ

“আল্ল-হু আকবার যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারুতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল ‘আযামাহ”

অর্থাৎ আল্লাহ মহান, রাজাধিরাজ, অসীম শক্তির অধিকারী, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য তাঁরই জন্য।

তারপর তিনি (সূরা ফাতিহার পর) সূরা বাকারা তিলাওয়াত করেন। এরপর কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘ রুকূ করেন। তিনি তাতে বলেন,

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

এরপর “সুবহা-না রব্বিয়াল আযীম”, “সুবহা-না রবিবয়াল আযীম”

অর্থাৎ আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান; আমার প্রভু পুত-পবিত্র ও মহান।

তারপর মাথা উঠালেন এবং তাঁর কিয়াম রুকূর ন্যায় দীর্ঘ হলো।

এরপর বললেন,

لِرَبِّيَ الْحَمْدُ ، لِرَبِّيَ الْحَمْدُ

অর্থাৎ সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য; সকল প্রশংসা আমার প্রভুর জন্য।

তারপর তিনি সিজদা করলেন, আর তাঁর সিজদা কিয়ামের মতো দীর্ঘ হলো। তিনি বললেন,

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى ، سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

“সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা, সুবহা-না রব্বিয়াল আ’লা”

অর্থাৎ আমার প্রভু পবিত্র ও মহান, আমার প্রভূ পবিত্র ও মহান।

তারপর মাথা উঠালেন (অর্থাৎ সিজদা হতে উঠে বসেন)। আর ২ সিজদার মধ্যকার সময় ছিল সিজদায় থাকা সময়ের ব্যবধানের মতো। এ সময় তিনি বলতেন,

رَبِّ اغْفِرْ لِي ، رَبِّ اغْفِرْ لِي

“রব্বিগ ফিরলী”, “রব্বিগ ফিরলী”

অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো; হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করো।

এমনকি তিনি সূরা বাকারা, আলে ইমরান, নিসা, মায়েদা অথবা আন’আম তিলাওয়াত করেন। বর্ণনাকারী সূরা মায়েদা না আনআম পর্যন্ত তিলাওয়াত করেছেন সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন।

রাসূল রাঃ সালাতের মধ্যে একটি আয়াত বারবার তিলাওয়াত করতেন

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত

তিনি বলেন, একবার রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকটি আয়াত (পূনরাবৃত্তি করে) তিলাওয়াত করতে থাকেন।

রাসূল রাঃ একদিনে ১৬ রাকাত নফল সালাতের বিবরণ

আসিম ইবনে জামরা রাঃ থেকে বর্ণিত

তিনি বলেন, আমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বল লন, তোমরা আসেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেন, আসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক’আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক’আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক’আত ও পরে ২ রাক’আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক’আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক’আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, নবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন।

রাসূল রাঃ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করতেন

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত

নবী রাসূল (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করেছেন।

রাসূল রাঃ মৃত্যুর পূর্বে অধিকাংশ নফল সালাত বসে আদায় করতেন

আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত

রাসূল (রাঃ) বসে সালাত আদায় করলে তিলাওয়াতও বসে করতেন। যখন মাত্র ৩০ অথবা ৪০ আয়াত বাকী থাকত তখন দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতেন তারপর রুকু ও সিজদা করতেন। এরপর তিনি দ্বিতীয় রাক’আতও অনুরূপভাবে আদায় করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *