অতিরিক্ত গরমে যে ১০টি কাজ করা যাবে না শরীরের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। গরমের দিনে শরীর সুস্থ রাখতে এবং এই ধরনের সমস্যা এড়াতে কিছু বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরি। অতিরিক্ত গরমে কিছু কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে এবং গরমের প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
এখানে ১০টি কাজ আলোচনা করা হলো যা অতিরিক্ত গরমে করা উচিত নয়:
১. রোদে বেশি সময় কাটানো
অতিরিক্ত গরমে সূর্যের তাপ শরীরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। রোদে বেশি সময় থাকার কারণে সানবার্ন, ডিহাইড্রেশন, এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সূর্যের সরাসরি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং তাপজনিত অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদে না থাকা উচিত।
করণীয়:
- ছাতা ব্যবহার করা।
- হালকা রঙের ঢিলেঢালা পোশাক পরা।
- প্রয়োজন হলে সূর্যের আলো থেকে বাঁচার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।
২. ভারী ব্যায়াম করা
অতিরিক্ত গরমে শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে, বিশেষ করে যখন কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা হয়। ভারী ব্যায়াম শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, যা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এই কারণে অতিরিক্ত গরমে ভারী ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
করণীয়:
- সকালে বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা, যখন তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
- শরীর ঠাণ্ডা রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- শরীরকে সতেজ রাখতে হালকা ব্যায়াম করা।
৩. গাড়ির মধ্যে বসে থাকা
গরমে গাড়ির ভেতর খুব দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এক ঘণ্টারও কম সময়ে গাড়ির তাপমাত্রা অতিরিক্ত হয়ে উঠতে পারে, যা শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি করে। এমনকি গাড়ির জানালা খোলা থাকলেও গরমের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং বিপজ্জনক হতে পারে।
করণীয়:
- গাড়ি রোদে না রেখে ছায়াযুক্ত জায়গায় পার্ক করা।
- গাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার চালিয়ে রাখা।
- দীর্ঘ সময় গাড়ির মধ্যে বসে থাকা এড়ানো।
৪. অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পান করা
ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল শরীরের ডিহাইড্রেশন বাড়িয়ে তোলে, কারণ এগুলো প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে তরল বের করে দেয়। অতিরিক্ত গরমে এ ধরনের পানীয় শরীরের পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে, যা শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে তোলে।
করণীয়:
- ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল পরিমিত পরিমাণে সেবন করা।
- প্রচুর পরিমাণে পানি বা ইলেকট্রোলাইট পানীয় পান করা।
৫. ঘন ঘন শীতল পরিবেশ থেকে গরমে যাওয়া
এয়ার কন্ডিশন্ড রুম বা শীতল পরিবেশ থেকে সরাসরি গরম পরিবেশে যাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাপমাত্রার দ্রুত পরিবর্তন শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যা তাপমাত্রার সাথে খাপ খাওয়ানো কঠিন করে তোলে।
করণীয়:
- শীতল পরিবেশ থেকে বের হওয়ার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা, যাতে শরীরের তাপমাত্রা সমানভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
- ধীরে ধীরে তাপমাত্রা পরিবর্তন করা।
৬. আঁটসাঁট পোশাক পরা
গরমে আঁটসাঁট পোশাক শরীরে তাপ আটকে রাখে এবং ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সুযোগ কমিয়ে দেয়। ফলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং অস্বস্তি বোধ হয়।
করণীয়:
- হালকা এবং ঢিলেঢালা সুতি বা তুলোর পোশাক পরা।
- রঙিন ও সুতির পোশাক পরা, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
৭. চড়া মশলা বা ভাজা খাবার খাওয়া
গরমে চড়া মশলা বা বেশি তেলে ভাজা খাবার খেলে শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। এসব খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং গরমে শরীরকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে। এ ধরনের খাবার ডিহাইড্রেশন বা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
করণীয়:
- সহজে হজম হয় এমন হালকা খাবার খাওয়া।
- বেশি ফল ও শাকসবজি খাওয়া, যা শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে।
৮. পানি পান না করা
অতিরিক্ত গরমে শরীর অনেক ঘাম ঝরায়, যার মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। যদি পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান না করা হয়, তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
করণীয়:
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
- শরীরে পানি ধরে রাখার জন্য ফ্রুট জুস বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করা।
৯. লম্বা সময় রান্না করা বা চুলার কাছে দাঁড়ানো
রান্নার সময় চুলার তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা বাড়ির ভেতরের তাপমাত্রাও বাড়িয়ে তোলে। লম্বা সময় ধরে রান্না করার ফলে শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
করণীয়:
- রান্নাঘর পর্যাপ্ত বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা করা।
- গরমে রান্না করার সময় সংক্ষিপ্তভাবে কাজ করা।
- ঠান্ডা খাবার তৈরি করা বা মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা।
১০. কাজের জন্য শরীরকে জোর করা
গরমে শরীরকে অতিরিক্ত চাপ দিলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই গরমের সময় শারীরিক কাজ করার সময় শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
করণীয়:
- কাজের সময় পর্যাপ্ত বিরতি নেওয়া।
- কাজের ফাঁকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।
- কাজ করার সময় শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া।
উপসংহার
অতিরিক্ত গরমের সময় শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরমে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অসুস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই উপরের ১০টি কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়ক কার্যক্রম পালন করা উচিত।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করার দোয়া । চোখের জ্যোতি ফিরে পাওয়ার আমল মাওলানা শরিফ আহমাদ