রমজান মাসে রোজা রাখা মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজাদার ব্যক্তি সুবহে সাদিকের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকে। এ ছাড়া যাবতীয় পাপ কাজ পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রোজাদারকে।
ইসলামী আইনজ্ঞরা এমন কিছু বিষয়ের উল্লেখ করেছেন, যা রোজাদারের রোজা মাকরুহ করে ফেলে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
সিয়াম থাকা অবস্থায় গড়গড়াসহ কুলি করা এবং নাকের গভীরে পানি পৌঁছান মাকরুহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি ভালোভাবে অজু করো এবং নাকের গভীরে পানি পৌঁছাও, যদি না তুমি সিয়াম থাকো। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৮৭)
যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয়
খাবারের স্বাদ গ্রহণ করা খাবার খাওয়ার সদৃশ। তাই বিনা প্রয়োজনে কেউ সিয়াম রেখে খাবারের স্বাদ নেবে না। কিন্তু যদি বিশেষ প্রয়োজন হয়—যেমন অসুস্থ ব্যক্তি বা শিশুর জন্য খাবার তৈরি করা, তবে তা মাকরুহ হবে না।
- সিয়াম অবস্থায় মুখে থুথু জমিয়ে তা গিলে ফেলা মাকরুহ।
- সিয়াম অবস্থায় পেস্ট বা এমন ঝাঁজযুক্ত মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা মাকরুহ। তবে মিসওয়াক করা জায়েজ।
- দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকলে শিঙা লাগানো মাকরুহ।
- কামাসক্ত হওয়ার ভয় থাকলে স্ত্রীকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা বা অনুরূপ কোনো স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ করা মাকরুহ।
- সন্দেহযুক্ত সময় পর্যন্ত বিলম্ব করে সাহরি খাওয়া মাকরুহ।
- সাহরি ও ইফতার ছাড়া ধারাবাহিকভাবে একাধিক দিনের সিয়াম রাখা মাকরুহ।
- বেশি কষ্ট হলে মুসাফিরের জন্য সিয়াম রাখা মাকরুহ।
সিয়াম অবস্থায় মুখে পানি নিয়ে বারবার কুলি করা, মাথায় পানি ঢালা এবং ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা মাকরুহ।
মাকরুহ অর্থ অপছন্দনীয়। যেসব কাজ করলে গুনাহ হয় না; তবে ইসলামে অপছন্দ করা হয়েছে সেগুলোকে মাকরুহ বলে।
রোজার ক্ষেত্রেও অনেক কাজ এমন রয়েছে, যেগুলো করলে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। তবে এ ধরনের কাজ করা ঠিক নয়
১. বিনা প্রয়োজনে কোনো কিছুর স্বাদ গ্রহণ করা বা চিবানো। তবে কোনো নারীর স্বামী কঠোর স্বভাবের হলে স্ত্রীর জন্য তরকারির স্বাদ পরীক্ষা করা মাকরুহ নয়।
২. এমনভাবে কুলি করা কিংবা নাকে পানি পৌঁছানো যে পানি ভেতরে প্রবেশের আশংকা হয়।
হজরত লাকিত ইবনে সাবিরা (রা.) থেকে বর্ণিত— রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন— ‘নাকে পানি দেওয়ার সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও। তবে রোজাদার হলে নয়। (জামে তিরমিজি, হাদিস: ৭৬৬; সুনানে আবু দাউদ ১/৩২২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ৯৮৪৪)
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখে অনেক থুতু জমা করে গিলে ফেলা।
৪. কয়লা, মাজন বা টুথপেস্ট দ্বারা দাঁত মাজা।
৫. বিনা প্রয়োজনে শিশুর খাদ্য চিবিয়ে দেওয়া। রোজাদার নারী তার বাচ্চার জন্য খাদ্য চিবানোকে ইবরাহীম নাখায়ী (রহ.) দোষের বিষয় মনে করতেন না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৪/২০৭)
৬. ইস্তেঞ্জায় অধিক পানি ব্যবহার করা।
৭. পানিতে বায়ু নিঃসরণ করা।
৮. গীবত–শেকায়াত করা, মিথ্যা বলা, গালিগালাজ করা, টিভি-সিনেমা ইত্যাদি দেখা, গান-বাদ্য শ্রবণ করা, এবং যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম তা তো বলাই বাহুল্য। হাদিসে কুদসিতে আছে— আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন— ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন অশালীন কথাবার্তা না বলে ও হইচই না করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯০৪)
সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতে এ শব্দ রয়েছে, রোজাদার যেন কোনো অন্যায়-অপরাধে লিপ্ত না হয়। (হাদিস: ৩৩৬৩ (১/৩২২)
৯. সিয়াম অবস্থায় শরীর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইনজেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরুহ, যার দ্বারা রোজাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।
সাবিত আল বুনানি (রহ.) বলেন, হজরত আনাসকে (রা.) জিজ্ঞাসা করা হলো সিয়াম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরুহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরুহ হবে। (বুখারি, হাদিস ১৯৪০)
১০.বীর্যপাত কিংবা সহবাসের আশংকা থাকাবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা।
১১.. স্ত্রীর ঠোঁটে চুম্বন করা— বীর্যপাত বা সহবাসের আশঙ্কা থাকুক বা না থাকুক।
১২. বিবস্ত্র অবস্থায় স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা।
১৩. সিয়াম অবস্থায় মাথায় পানি ঢালা এবং ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা।
১৪. বিনা ওজরে গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন (যা খাদ্যের চাহিদা মেটায়) নেওয়া মাকরুহ।
১৫. এমন কাজ করা মাকরুহ যা দ্বারা রোজাদার নিতান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে সিয়াম প্রতি বিরক্তিভাব আসে। যেমন— রোজা রেখে প্রচণ্ড ভারি কাজ করা অথবা সিয়াম রেখে শিঙ্গা লাগানো/ সিয়াম রেখে রক্তদান।
সূত্র: ফাতাওয়া আলমগিরি ১/১৯৯-২০০, রদ্দুল মুহতার ৩/৩৯৯-৪০০। আল মুহিতুল বুরহানি ৩/৩৫৬
আরো পড়ুনঃ Redmi Note 10 ফোনের সম্পূর্ণ বাংলা রিভিউ