মুক্তিযুদ্ধ রচনা নবম- দশম শ্রেণীর জন্য

মুক্তিযুদ্ধ

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা কেমন আছো আসা করি ভালে আছো। আবারো চলে এলাম তোমাদের কাছে নতুন পাঠ্য অনুশীলন নিয়ে অবশ্যয় পড়ে উপকৃত হবে। সুতরাং শুরু করা যাক আজকের পাঠ্যপুস্তক রচনা

ভূমিকা

বাঙালির সুদীর্ঘ কালের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে জাতি হিসেবে চিরকাল বন্ধন অসহিষ্ণু। বাঙালির প্রাকৃতিক পরিবেশে আছে তার প্রতিবাদের ভাষা। পরের বশ্যতা সে কোন কালে মেনে নিতে পারেনি। তাই বার বার এখানে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠেছে।সে আগুনে তারা শৈর্যবীর্য দীপ্ত হয়ে ওঠেছে।অবশেষে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে তার প্রান প্রিয়,স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালে সে ঐতিহাসিক মুক্তি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যে বোধ বা চেতনাকে কেন্দ্র করে তার নাম মুক্তি যুদ্ধের চেতনা। ত্রিশ লক্ষ প্রানের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি তাকে চির সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রেরনা জোগাবে চির আবহমান কাল।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি

ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের জাতাকলে প্রায় দু” শ বছর ধরে নিষ্পেষিত হয়েছিল এ জাতি। ১৯৪৭ সাল থেকে এ উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি লাভ করলে ও মুক্তি আসেনি বাঙালি জাতির। ১9৪৭ সালে পাকিস্তানি শাসকদের শৃঙ্খলে আবার বন্ধি হয় বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালে সংগ্রাম করে ধাপে ধাপে মুক্তির পথ খুজছিল বাঙালি জাতি। ১৯৫২ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রথম বলির শিকার হন ভাষা শহীদ শফিক, রফিক, সালাম, বরকত,জব্বার প্রমুখ।১৯৫৪ সালে মুসলিমলীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা জয় লাভ ১৯৫৮ সালের আয়ূবখানের শাসন বিরোধী আন্দোলন হতে ১৯৬৬ র ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৯ এর গনঅভ্যুত্থান সহ বিভিন্ন গণআন্দোলন এর মধ্য দিয়ে বিকাশ লাভ করে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন।

১৯৭০ সালের ৭ ই ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তদানিন্তন পূর্বপাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করে। ১০ দিন পর ১৭ ই ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ৩১০ টি আসনের মধ্যে ২৯৮ টি আসনে জয় লাভ করে এরপর ক্ষমতা হস্তান্তরের ইয়াহিয়ার গড়ি মসি ও ভূট্টোর ভেটো অব্যাহত থাকে।অবশেষে লাখ লাখ জনতার মধ্যে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনে স্বাধীনতা সংগ্রামেে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করা এটা কোন অস্পষ্ট বিষয় নয়।

সর্বশেষে ২৫ শে মার্চ রাতে নিরস্ত্র ঘুমন্ত নগর বাসীর উপর পাক বাহিনীর বর্বর আক্রমনের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কতৃক স্বাধীনতা চূড়ান্ত ঘোষনা বানী প্রচার এবং বীর বাঙালি অস্ত্রধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর এই স্লোগান এ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়

মুক্তি যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা নির্বিচারে চালায় নির্যাতন, ধর্ষন,হত্যাযজ্ঞ।২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু কে গ্রেফতার করা হয়। ২৬ শে মার্চ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা শুরু হয়। কতিপয় বিবেকহীন আলবদর,আলশামস রাজাকার ছাড়া গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ২৬ শে মার্চ চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে স্থানীয় জননেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন।

১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে রাষ্টপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে উপরাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী, এম মনসুর আলিকে অর্থমন্ত্রী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান কে স্বরাষ্ট্র ত্রান ও পুনর্বাসন মন্ত্রী,এবং খোন্দকার মোশতাক আহমেদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী করে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। ১০ এপ্রিল আস্থায়ী সরকারের এক আদেশে আওয়ামী লীগের নির্বাচুত এম এন এ জেনারেল এম এ জি ওসমানীকে মুক্তি যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, মেজর জিয়াকে চট্টগ্রাম সেক্টর, মেজর সফিউল্লাহকে ময়মনসিংহ সেক্টর খালেদ মোশাররফ কে কুমিল্লা সেক্টর, মেজর আবু ওসমান চৌধরীকে কুষ্টিয়া সেক্টরের প্রধান কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে বৈদ্যনাথ তাকে মুজিব নগর নাম করন করে সে মুক্ত ভূখন্ডে দেশি বিদেশী সাংবাদিকদের উপস্থিতি তে অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যরা শপথ গ্রহন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সনদ বা ঘোষনাপত্র পাঠ করেন আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এম এন এ মুহাম্মদ ইউসুফ আলি। একই অনুষ্ঠানে এম এ জি ওসমানী কে মুক্তি যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এবং তার নেতৃত্বে অস্থায়ী রাষ্টপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম কে গার্ড অব অনার প্রধান করা হয়।

দেশের সমগ্র সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় গ্রহনকারী রাজনৈতিক দল ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনে নেতাকর্মীদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধা ক্যাম্প এবং শরনার্থী ক্যাম্প গড়ে ওঠতে থাকে। চার পাচ মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের গতিবেগ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনের পর ভারত সরকার প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা প্রধান করতে শুরু করে সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী সরকারের কর্যক্রম বৈপ্লবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। পাক হানাদার বাহিনী ওপর চলে প্রচন্ড গেরিলা আক্রমন। প্রবাসী সরকার বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্ব বাসীকে আবেদন জানায় এবং যোগাযোগ স্থাপন করে চলে।

৪ ঠা ডিসেম্বর হতে মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যোথ আক্রমন শুরু হয় ৬ ই ডিসেম্বর সর্বপ্রথম ভারত বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দেয়। দেশের অভ্যন্তরে পাক বাহিনীর মরন কামড় দিয়ে গনহত্যা ধর্ষন ও নির্যাতন চালাতে থাকে। পাক বাহিনীর সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর থেকে মার্কিন সৌপ্তম নৌ বহরকে বঙ্গোপসাগরে দিকে প্রেরন করে। আমাদের পক্ষ নিয়ে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সপৃতম নৌ বহরকে অগ্রসর না হওয়ার জন্যে হুশিয়ারি উচ্চারন করে।

পরাজয় নিশ্চিত ভেবে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্য পাক বাহিনীর আলবদর রাজাকার সহযোগিতায় ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধি জীবিদের হত্যা করে।এদিকে ভীত সন্ত্রস্ত্র পাক বাহিনীর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে ভারতরীয় পূর্বাঅঞ্চলীয় সেনা অধিনায়ক লে. জে. জগজিৎ সিং অরোবর এর কাছে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ করেন।

বর্তমান প্রক্ষাপট

যে স্বপৃন বা আকাঙ্খা সামবে রেখে মুক্তি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল সে স্বপ্ন নানা কারনে গত তেতাল্লিশ বছরে ও সাফল্যের লক্ষ মাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি।স্বাধীনতার পর বার বার সামরিক অভ্যন্থান হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়প ক্ষমতা দখল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকারীদের দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্র কারীদের অপতৎপরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য,যুব সমাজের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা, বেকারত্ব, জনস্ফীতি,আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ দূর্নীতি ইত্যাদি অবক্ষয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য বা চেতনাকে বিপন্ন করে চলেছে।

প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধারা তাদের প্রাপ্য অধিকার ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজন দেশপ্রেমিক গনতান্ত্রিক সংঘবদ্ধ প্রয়াস ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ ও মানবতাবিরোধী, যুদ্ধ অপরাধীর বিচার।আশার কথা এই যে সম্প্রীতি বিচারের কাজ শুরু করে ইতিমধ্যে কয়েকরি মামলা রায় চূড়ান্ত করা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা রায় কার্যকর ও হয়েছে। দেশে মুক্তি যুদ্ধের চেতনা সামগ্রিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে গেলেযুদ্ধঅপরাধীদের বিরুদ্ধে গনজোয়ার সৃষ্টি করে নতুন প্রজন্ম গোটা জাতিকে দাড়াতে হবে।

উপসংহার

সামগ্রিক আলোচনা থেকে আমরা এ সত্যে উপনীত হতে পেরেছি যে, মুক্তি যুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যে কঠিন স্বাধীনতা আত্নত্যাগের মাধ্যমে অর্জন করেছি তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। মুক্তি যুদ্ধের চেতনা তখনই সাফল্য উদ্ভাসিত হবে যখন রাজনৈতিক স্বাধীনতা, আর্থ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা রূপান্তরিত হবে।সৈ লক্ষ আজ সমাজের সর্বস্তের মুক্তি যুদ্ধের চেতনা কে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন।দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ সমুহ জাগ্রত করা গেলে তবেই আমাদের স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এক গৌরবময় স্তরে উর্ত্তীন হবে।

প্রিয় ছোট ভাই – বোনেরা রচনাটি পড়ে কেমন লাগল তা অবশ্যয় আমাদের জানাবে,কেমন হলে তোমাদের আরো ভালো লাগবে তেমন করে আনার চেষ্টা করব আর ততক্ষণ ট্রিক নোটিশের সাথে থাকবে, শুভ কামনা রয়ল তোমাদের জন্য,,, ধন্যবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *