ছেলে সন্তান হওয়ার দোয়া ।
ছেলে সন্তান
মহান আল্লাহ তাআলা প্রিয় বান্দাদেরকে অসংখ্য নেয়ামত দিয়েছেন । শ্রেষ্ঠ নেয়ামত বা উপহার স্বরূপ দিয়েছেন সন্তান । সন্তান দাম্পত্য জীবনকে আরো সুখময় করে তোলে । ফুলের মত জীবন বাগানকে সাজিয়ে দেয় । এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগায় ।
কিন্তু বিয়ের পর অনেক দম্পতি সন্তানের মুখ দেখতে পায় না । বছরের পর বছর চলে যায় । কোন সন্তান জন্ম লাভ করে না । তারা চিকিৎসা গ্রহণ করে । কারো হয় । কারো তবুও হয় না । আবার অনেকের শুধু কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে । ছেলে সন্তান হয় না । এখন তাদের করণীয় কি ? ছেলে সন্তান হওয়ার আমল জানতে চান অনেকেই । তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল । সুতরাং পড়তে থাকুন ।
সন্তান দেওয়ার মালিক আল্লাহ :
সন্তান দেওয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তাআলা । তিনি যাকে ইচ্ছা সন্তান দান করেন । কোন প্রতিরোধই তা ঠেকাতে পারে না । আবার তিনি যদি কাউকে না দিতে চান সবকিছু পারফেক্ট থাকার পরেও সন্তান হবে না । পবিত্র কুরআনে এসেছে,
لِلّٰہِ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ؕ یَہَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ اِنَاثًا وَّیَہَبُ لِمَنۡ یَّشَآءُ الذُّکُوۡرَ ۙ اَوۡ یُزَوِّجُہُمۡ ذُکۡرَانًا وَّاِنَاثًا ۚ وَیَجۡعَلُ مَنۡ یَّشَآءُ عَقِیۡمًا ؕ اِنَّہٗ عَلِیۡمٌ قَدِیۡرٌ
অনুবাদ:নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহ তা’আলারই। তিনি যা ইচ্ছা, সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা-সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।
অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।( আশ-শূরা ৪৯–৫০)
অত্র আয়াত থেকে স্পষ্ট হলো নারীর গর্ভের সন্তান ছেলে এবং মেয়ে হওয়া আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতেই হয় । এখানে নারীর কোন দোষ নেই । তাই তাদের তিরস্কার করা বোকামি ।
পুত্র সন্তান লাভ করার জন্য কোন পীর কিংবা মাজারে যাওয়ার প্রয়োজন নেই । সেখানে মান্নত, নজর- নেওয়াজ দেওয়া নিষ্প্রয়োজন । কেননা তারা সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না । নিয়মিত ধর্মীয় বিধান মেনে চললে কোন তাবিজ কবজের ও দরকার হয় না ।
তবে হ্যাঁ ! আমলী কোন ব্যক্তি থেকে সন্তান লাভের বিশেষ পদ্ধতি শেখা। আমলের কথা শোনা বা শরীয়াতের ভেতরে থেকে শর্তসাপেক্ষে তাবিজ নেওয়া জায়েজ আছে । আর একটি কথা পুত্র সন্তানের জন্য হাহাকারের কিছু নেই। আল্লাহ তাআলা দিলে ভালো । আলহামদুলিল্লাহ। না দিলেও আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ যা দিয়েছেন তাকেই আদর্শ মানুষ করুন। নেককার হিসাবে গড়ে তুলুন। এটাই সফলতা বয়ে আনবে।
ছেলে সন্তান হওয়ার জন্য করণীয় :
ছেলে সন্তান লাভের জন্য বেশ কিছু করণীয় আছে । তার মধ্যে প্রধান দুটি ।
১. দুআ করা । কান্নাকাটি করে নিয়মিত দুআ করুন।
মাকবুল ওয়াক্তে দুআ করুন। দুআর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে না।
২.শারীরিক মিলনের নিয়মে পরিবর্তন করা । অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর আগে–পরে বীর্য নির্গত করা । এটার দ্বারাও পুত্র সন্তান জন্ম হতে পারে । এ সম্পর্কে হাদীস আছে । দেখুন –
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আজাদ কৃত গোলাম হযরত সাওবান রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, পুরুষের বীর্য সাদা আর মহিলাদের বীর্য হলুদ । যখন উভয়ের বীর্য একত্র হয় এবং পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় । আর যখন মহিলার বীর্য পুরুষের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় । ( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৯)
ছেলে সন্তান লাভে করণীয় বিষয়টি হয়তো বুঝতে পেরেছেন । না বুঝলে পরের অংশটি পড়ুন। ভিন্ন শিরোনাম হলেও বিষয়টি ক্লিয়ার হবে ইনশাআল্লাহ।
ছেলেমেয়ে মা-বাবার আকৃতি কেন হয় ?
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । এক ইহুদি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলো ছেলেমেয়ে মা-বাবার আকৃতিতে কেন হয় ? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন যদি পুরুষের বীর্য মহিলার বীর্যের উপর বিজয়ী হয় ,তখন আল্লাহর হুকুমের ছেলে হয় এবং মায়ের আকৃতিতে হয় । আর যদি স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর বিজয়ী হয় ,তখন কন্যা সন্তান হয় । কন্যা হলে বাবার আকৃতিতে হয় । অর্থাৎ যার বীর্য বিজয়ী বা সহবাসের স্থায়িত্ব বেশি তার বিপরীত আকৃতি পায় । ( বুখারী ও মুসলিম)
ছেলে সন্তান
সম্পর্কে আরেকটি হাদীস দেখুন । হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । উম্মে সুলাইম রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা ঘুমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায় ।( অর্থাৎ পুরুষের ন্যায় মহিলার স্বপ্নদোষ হয়) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,যখন কোন মহিলা এরূপ স্বপ্ন দেখবে তখন সে গোসল করে নেবে । উম্মে সুলাইম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বললেন, এ কথায় আমি লজ্জাবোধ করলাম ।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন মহিলাদের কি এমন হয় ? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ মহিলাদের এরূপ না হলে ছেলে মেয়ে তার সাদৃশ্য কোত্থেকে থেকে পায় ? পুরুষের বীর্য হচ্ছে গাঢ় ও সাদা আর মহিলাদের বীর্য পাতলা ও হলুদ । উভয়ের মধ্য থেকে যার বীর্য উপরে যায় (বেশি শক্তিশালী হয়) অথবা আগে চলে যায় সন্তান তারই সাদৃশ্য হয় । ( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৩)
ছেলে সন্তান লাভের দোয়া:
১. যে নারীর ছেলে সন্তান হয় না এবং প্রতিবারই কেবল মেয়ে সন্তান প্রসব করে ,তার পেটের উপর একটি গোল রেখা টেনে তার ওপর ইয়া মাতিনু (يامتين ) পাঠ করতে করতে ৭০ বার আঙ্গুল ঘুরাবেন বা ফিরাবেন । এই আমলের বরকতে তার ছেলে সন্তান হবে ইনশাআল্লাহ।
( এই আমলটি নারীর স্বামীর করা উচিত )
২. যে ব্যক্তি সহবাসের পূর্বে আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (المتكبر ) আল মুতাকাব্বিরু ১০ বার পাঠ করবে , আল্লাহ তাআলা তাকে সৎ নেককার ছেলে সন্তান দান করবেন ইনশাআল্লাহ ।
৩. এই আয়াতটি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার করে পাঠ করলে পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করবে ইনশাআল্লাহ ।
رَبِّ لَا تَذَرۡنِیۡ فَرۡدًا وَّاَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ ۚۖ
অনুবাদ: হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস। (আল আম্বিয়া – ৮৯)
৩. যে নারী শুধু কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে ,সে নারী যখন গর্ভবতী হবে তখন নিচে দোয়াটি লিখে তা পানি দ্বারা ধুয়ে পান করাবেন । এতে সে পুত্র সন্তান লাভ করবে ইনশাআল্লাহ ।
بسم الله الرحمن الرحيم – لاء لا الاوس والله من وراءهم محيط -حيث يلون بالحق ده فاه ح ص د –
৪.যে নারী শুধু কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে নারী যখন গর্ভবতী হবে, তখন নিচের দোয়াটি ৭০ টি কাগজে লিখে দৈনিক একটি কাগজ গোল্লা বানিয়ে মিষ্টি দ্রব্যের ভেতর ঢুকিয়ে খাওয়াবেন । ইনশাআল্লাহ সে পুত্র সন্তান লাভ করবে । তবে এক্ষেত্রে গর্ভে কন্যাসন্তান থাকলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
سبحان الذي خلق الازواج كلها مما تنبت الارض ومن انفسهم مما لا يعلمون . وصلى الله على خير خلقه محمد واله اجمعين .
ছেলে সন্তান লাভের তাবিজ :
১. গর্ভের প্রথম মাসে গর্ভবতীর ডান পাজরে সূরা আলা (৩০ পারার মধ্যে ) লিখে দিলে আল্লাহর ইচ্ছায় তার গর্ভে ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে ।
২. সূরা ইউসুফ লিখে এমন ভাবে তাবিজ বানাবেন যেন কোন অক্ষর মুছে না যায় । এরপর গর্ভবতীর গলায় বেধে দিবেন । এতে অবশ্যই ছেলে সন্তান জন্ম নিবে ইনশাআল্লাহ ।
৩. যে নারীর কোন ছেলে সন্তান হয় না, নারী গর্ভবতী হওয়ার তিন মাসের মধ্যে হরিণের চামড়ার উপর নিচের আয়াতসমূহ গোলাপজল মিশ্রিত জাফরান খালি দিয়ে লিখবেন । তারপর গর্ভবতী নারীর গলায় বেঁধে দিলে ইনশাআল্লাহ মনের আশা পূরণ হবে ।
اَللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَحۡمِلُ کُلُّ اُنۡثٰی وَمَا تَغِیۡضُ الۡاَرۡحَامُ وَمَا تَزۡدَادُ ؕ وَکُلُّ شَیۡءٍ عِنۡدَہٗ بِمِقۡدَارٍ . عٰلِمُ الۡغَیۡبِ وَالشَّہَادَۃِ الۡکَبِیۡرُ الۡمُتَعَالِ یٰزَکَرِیَّاۤ اِنَّا نُبَشِّرُکَ بِغُلٰمِ ۣ اسۡمُہٗ یَحۡیٰی ۙ لَمۡ نَجۡعَلۡ لَّہٗ مِنۡ قَبۡلُ سَمِیًّا. بحق مريم عيسى ابنا صالحا طويل العمر بحق محمد واله .
নেককার সন্তান লাভের দোয়া :
নেকার সন্তান লাভের জন্য কয়েকটি দোয়া আছে।
এগুলো বেশি করে পাঠ করুন ।
ছেলে সন্তান লাভের দোয়া
رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ
অনুবাদ: হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। (আস ছাফ্ফাত – ১০০)
২ নং দোয়া
رَبِّ ہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ
অনুবাদ:হে আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল ইমরান – ৩৮)
সুসন্তান লাভের উপায় :
সহবাসের পূর্বে এই দোয়াটি পাঠ করুন ।
بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
অনুবাদ: হে আল্লাহ আপনার নামে শুরু করছি । আপনি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখুন । আমাদের এই মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখুন ।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রী সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয় । এ মিলনে যদি তাদের কোন সন্তান আসে , সে সন্তানকে শয়তান কোন ক্ষতি করতে পারবে না ।
( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৮৮)
লেখক ও শিক্ষক
্নাইচ